প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে
আরও একটি বড় প্রশ্ন—শিবিরের ভোট ছিল প্রায় ৩ হাজার। তাহলে বাকি ভোটগুলো কোথা থেকে এলো? ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট ছাড়া তারা এত ভোট কিভাবে পেল? কেন নির্বাচনের আগে শিবির হল কমিটি গঠন করেনি?আসলে তারা আপনাদের সাথে বুদ্ধি দিয়ে খেলেছে। যখন আমাদের সহযোদ্ধারা নারী ভোটারদের নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করছিল,দলের হাইব্রিড বট বাহিনী সবাইকে ‘শাহবাগী’ আর ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিচ্ছিল, তখন তারা নীরবে নিজেদের ভোট নিশ্চিত করছিল।আমরা খবর দিয়েও সতর্ক করেছিলাম, কিন্তু ক্যাম্পেইনের অ্যাকশন প্ল্যানে আমাদের একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
#নেতৃত্বের জবাবদিহিতা নিশ্চিত প্রয়োজন-
বুড়ো ছাত্রদলের সভাপতি-সেক্রেটারিরা যারা এখনও ছাত্রদলের দায়িত্বে আছেন, তাদের এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। হল কমিটিকে আওয়ামীকরণের মাধ্যমে Blending করেছেন তারাও দায়ী। এদের নেতৃত্বে ছাত্রদলের আলোকিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই তাদের বর্জন করুন।একইভাবে দলের পক্ষ থেকে ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারাও সমানভাবে দায়ী।
আমার বিস্ময় এখানেই—এত বড় ক্যাম্পেইনে কেন ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএস আমান উল্লাহ আমান, রি পন ভাই, সোহেল ভাই, দুদু ভাই, মনির ভাইদের মতো অভিজ্ঞ নেতাদের সামনে আনা হলো না? অন্যদিকে, হল প্যানেলে বকুল ভাই ও হেলাল ভাই নিজেদের মতো করে ভাগাভাগি করছেন। এটা কি ব্যক্তিগত ব্যবসা ,নাকি দলের অস্তিত্বের লড়াই?
নির্বাচন কৌশলের অসংগতি বা ভুল নেরেটিভ -
স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিল, সেটা মেনে নেওয়া হলো কেন? আর মেনে নেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আবার ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিয়ে প্রচারণা চালানো হলো কেন? প্রথম থেকেই তো নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। আমরা শুরু থেকেই বলেছি এই নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাহলে কার পরামর্শে, কোন বুদ্ধিতে এই নির্বাচনে অংশ নিলেন?
রাজনৈতিক আদর্শের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার বন্ধ হোক! বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৫ বছর পার করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নিয়েছিল, তাদের সন্তানরাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তাই কাউকে ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। মনে রাখবেন, ভারতীয় দালালরা সবসময় বিভাজনের ষড়যন্ত্রে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ব্যবহার করেছে। আর এখন দেশে প্রায় ৫ কোটি নতুন ভোটার। হিসাব বুঝে, দায়িত্বশীলভাবে রাজনীতি করতে হবে—কারণ এটি এক ধরনের বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশ।
#দায় ও করণীয়
ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক বকুল ভাই এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। নির্বাচনকালীন তার গতিবিধি খুবই হাস্যকর ও রহস্যজনক ছিল।একইভাবে টুকু ভাই ও এ্যানী ভাইদেরও দায় নিতে হবে, কারণ তারাও ছাত্রসম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
ছাত্রদলের সহযোদ্ধা ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান—বিজয়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান। ট্যাগিং রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন। বিজয়ীরা যেন ক্যাম্পাসে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর অবস্থানকে সম্মান জানিয়ে রাজনীতি করে এটা নিশ্চিত করা জরুরী।হেলমেট বাহিনী হয়ে যাবেন না—তাহলে ক্যাম্পাসে আপনাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
আমি বলব, ছাত্রদলের এই পরাজয় আসলে আমাদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছে। এজন্য আত্মসমালোচনা করতে হবে, আমাদের সঙ্গে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। আমরা দেখতে চাই ছাত্রদল কিভাবে জেতে, হারের গল্প নয়।
লেখক
মেধা
সাবেক সংগ্রামী ছাত্রদল নেত্রী।